চোরের দশদিন আর পালানোর একদিন
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অদ্ভুত খেলায় মেতেছে নেতা-নেত্রীরা। কে কার আগে পালাবে, সেটি যেন এক অলিম্পিক ইভেন্ট।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন পালানোর এক অদ্ভুত অসাধারণ প্রতিযোগিতা চলছে। কে কার আগে পালাবে, সেটি যেন এক অলিম্পিক ইভেন্ট। মন্ত্রী-এমপিরা চুরি করা টাকার বস্তা বগলদাবা করে কেউ ছুটছেন দুবাই, কেউ সিঙ্গাপুর, আর কেউ লন্ডনের পথে। তবে সবার জন্য উড়োজাহাজে ওঠা তো আর সহজ নয়! কেউ কেউ আবার ভারতীয় সীমান্তের দিকে মুখ ফিরিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বর্ডার ক্রস করাটা কোনো দানাপানির কাজ নয়। বিজিবির হাতে ধরা পড়ে এখন অনেকেই বেহাল দশায় দিন কাটাচ্ছেন।
সীমান্তে চোর-পলাতক রাজনীতিকের মিলনমেলা
কল্পনা করুন, একজন মন্ত্রী সাহেব। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ধান্দা করছিলেন কীভাবে টাকাগুলো নিয়ে দেশ ছাড়বেন। প্লেনে ধরা পড়ার ভয়ে শেষমেশ তিনি ঠিক করলেন, “ভারতে গিয়েই নতুন ঠিকানা খুঁজে নেব!” রাতে গা ঢাকা দিয়ে পাজামা-পাঞ্জাবি পরে একদল দালালের সহায়তায় সীমান্তের দিকে রওনা দিলেন। কিন্তু সেখানেই ঘটল বিপত্তি।
বিজিবি তাদের ধরল, সঙ্গে স্থানীয় কিছু লোকও দেখতে পেল, “আরে, এ তো সেই চোর মন্ত্রী!” গণপিটুনি দিয়ে তবেই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিল। ধরা পড়ার পর মন্ত্রীর মুখের ভাষা, “আমি তো স্যার সঠিক পথে যাচ্ছিলাম, ভুল করে এখানে চলে এসেছি!” কিন্তু তার কথায় কেউ বিশ্বাস করল না।
জনতার রোষ আর চোরের অসহায়ত্ব
এভাবে পালানোর চেষ্টা করলেই তো আর শেষ রক্ষা হয় না। যারা বিজিবির হাতে ধরা পড়ছে, তারা পরিণত হচ্ছে স্থানীয়দের হাসির খোরাক আর গণপিটুনির শিকার। একবার এক এমপি সাহেব ভারতে পালাতে গিয়ে গ্রামে ধরা পড়লেন। তখন গ্রামের এক বৃদ্ধা বললেন, “পালাও পালাও, চুরি করে দেশ ডুবিয়ে এখন নিজের জীবন বাঁচাও!” আরেকজন তো হাসতে হাসতে বলল, “চোর পালাতে গিয়ে চোরাই পথে ধরা পড়েছে, বেশ হয়েছে!”
বিচিত্র পালানোর কৌশল
কেউ নকল দাড়ি লাগিয়ে চাষার বেশ ধরে পালাচ্ছে, কেউ নাকি গরুর রাখাল সেজে সীমানা পেরোতে চাইছে। কিন্তু বর্ডারের প্রহরীরা আর এত সহজে ফাঁকি খাবে কেন? একবার এক রাজনীতিক ধরা পড়ল বর্ডারের নৌকা ঘাটে। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, “আপনি তো এমপি, এখানে কী করছেন?” তিনি বললেন, “আমি তো মাছ ধরতে এসেছি!” তার এই অজুহাতে বিজিবি অফিসার বললেন, “আপনার মতো মাছ শিকারিরা এখন বড় বড় বিলে আছে, দেশটাই শুষে ফেলছেন!”
গণপিটুনির ভয়ানক পরিণতি
তবে সবচেয়ে করুণ অবস্থা হলো সেই সব চোরদের, যারা স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে। গণপিটুনির শিকার হয়ে তারা বোঝে, টাকার পাহাড় বানানো আর পালানোর পথে জীবন বাঁচানো এক জিনিস নয়। একবার এক সাবেক মন্ত্রী স্থানীয়দের কাছে ধরা পড়লে জনতা তার গায়ে ধানের তুষ ছিটিয়ে বলল, “কৃষকের ধান চুরি করলে এখন এই তুষই তোমার পোশাক!”
টাকার পাহাড়ে লজ্জার প্রাসাদ
এত টাকা বানিয়ে এসব নেতা-নেত্রীরা কেন পালায়? কেউ সিঙ্গাপুরে বাড়ি বানায়, কেউ লন্ডনে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলে। কিন্তু দিনশেষে টাকা তাদের আত্মরক্ষা করতে পারে না। যারা বিজিবি কিংবা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে, তাদের কাহিনী এখন হাস্যরস আর বিদ্রূপের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শেষ কথা
বাংলাদেশের রাজনীতিতে পালানোর এই প্রতিযোগিতা আমাদের শিখিয়েছে, সত্যিকারের শক্তি টাকায় নয়, সততায়। হাজার হাজার কোটি টাকা লুকিয়েও শেষমেশ কারোরই শেষ রক্ষা হয় না। জনগণ এখন স্মার্ট। তারা শুধু দেখছে, আর বলছে, “জন্মেছি দেখে গেলাম চোর ধরা দেখার মজাই আলাদা!”
রাজনীতি যদি সেবার জায়গা হয়, তবে এসব পালানোর দরকার কেন? আবারও কি হবে পলাতক রাজনীতির উৎসব? নাকি একদিন এই পালানোর গল্পই শেষ হবে? সময়ই দেবে উত্তর।
চোরের দশদিন যায় সুখে বিলাসে,
লুকানো টাকায় রাজপ্রাসাদ সাজায় আড়ম্বরে।
কিন্তু সত্য যখন দেয় তার রুদ্র ডাক,
পালানোর পথে পড়ে চোরের শিয়রে ফাঁক।
সীমান্তে ধরা, কিংবা প্লেনে নিষেধাজ্ঞা,
গণপিটুনিতে ভুলে যায় সব ভ্রান্ত অহঙ্কার।
চুরি করা টাকার নেই কোনো শেষ ঠিকানা,
চোরের দশদিনে আসে পালানোর যন্ত্রণা।
Copyright © 2020–2024 Tuhin Sarwar. All rights reserved.
Comments
Post a Comment